Life Story of Robert Downey Jr.



সিনেমা প্রেমী মানুষদের কাছে তাদের পছন্দের সুপারহিরোর কথা জানতে চাইলে অনেকেই বলবে
  Captain America, Thor বা Hulk এর কথা। আবার অনেকেই বলবে Iron Man এর কথা। সিনেমার
এই সুপারহিরোগুলো বাস্তব জীবনে একেকজন সাধারণ মানুষ তাদের অতীত দেখলে খুঁজে পাবেন কতটা ত্যাগ ও সাহসীকতা ছিল তাদের জীবনে। এই গল্পগুলো জানলে সে হয়তো আপনার কাছে একজন সুপারহিরোই থাকবে না, হয়ে উঠবে একজন সত্যিকারের আদর্শ। তাদের জীবন থেকে খুঁজে পাবেন সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।

 আমাদের বর্তমান প্রজন্মের সবথেকে বড়   অভিশাপ হলো মাদকাসক্তি। এই নেশা শুধু   একজন নেশাকারীকেই ধ্বংস করে থেমে থাকে   না, এর ভয়াবহ প্রভাব পরে পরিবার থেকে শুরু   করে বন্ধুবান্ধব সব ক্ষেত্রেই। আজকে জানবেন   সেই সুপারস্টার এর কাহিনী যে কিনা ছিল চরম   মাদকাসক্তে লিপ্ত। তারপরও শূন্য থেকে হয়েছেন   আজকের হলিউডের সবচেয়ে বড় স্টারদের একজন। তিনি আজ হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করতেছে। ইতিমধ্যেই বুঝে গিয়েছেন কার কথা বলতেছি। হ্যাঁ, বলতেছি Iron Man খ্যাত Robert Downey Jr. এর কথা। 

৫৬ বছর বয়সী এই অভিনেতার পুরো নাম Robert Downey Junior সংক্ষেপে সবাই তাকে RDJ বলেই ডাকে। যাকে আমরা মার্ভেল লাভারসরা তার বিখ্যাত সিনেমা আয়রন ম্যানের জন্য চিনি। তিনি ১৯৬৫ সালের ৪ এপ্রিল Manhattan, New York, United States এ জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা Robert Downey Sr. ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা। আর মা Elsie Ford ছিলেন একজন অভিনেত্রী। যেহেতু বাবা মা দুজনেই মিডিয়ার মানুষ তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা চাইতেন ছেলে অভিনয় করুক। মাত্র ৫ বছর বয়সে, রবার্ট বাবার ছবি Pound (1970) এ অভিনয় করে। এই সিনেমাটি হয়ত তখন অনেকেরই নজরে পড়েনি। অভিনয়ে যুক্ত হওয়ার পর অনেক অল্প বয়সেই তিনি অভিনয়ের নেশায় জড়িয়ে গিয়েছিলেন। রাতের বেলা সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি অভিনয়ের চর্চা করতেন। আর তার এই গোপন নেশার একমাত্র দর্শক ছিল তার বোন। ছয় বছর বয়সে যেখানে অন্যান্য শিশুরা যেখানে খেলাধুলা করে, চকলেটের পেছনে ছোটে সেখানে শিশু রবার্টের পরিচয় হয়ে যায় মাদকের সাথে। মাত্র আট বছর বয়স থেকেই সে হিরোইন ও কোকেনে প্রচন্ডভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে। মাদক থেকে দূরে থাকতে মাত্র দশ বছর বয়সে সে বেলে ডান্সের উপর চর্চা শুরু কতে থাকে। যখন তার বয়স ১৩ বছর, তখন তার বাবা মায়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ১৬ বছর বয়সে নেশার জন্য তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে তিনি আরও নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন।

মাদকের জালে জড়িয়ে পড়লেও তিনি এটা ভালভাবেই জানতেন নেশা ছাড়াও তার আরেকটি জিনিসে বিশেষ দক্ষতা আছে, আর সেটা হচ্ছে অভিনয়। সেই অভিনয়ের পিছনেই দৌড়াতে শুরুকরলেন তিনি। মাত্র বিশ বছর বয়েসে প্রিয় মানুষটির সাথে খারাপ আচরণের জন্য তাদের প্রায় সাত বছরের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। অতিমাত্রায় আসক্তির প্রভাবে তিনি প্রায় মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছিলেন। এতকিছুর পরও ১৯৯২ সালে তার জীবনে আবারও একটি বড় সুযোগ আসে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। Chaplin মুভিতে অভিনয় করার সুযোগ। তিনি সেখানে দূর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন। দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচক সবাই তার অভিনয় দক্ষতার প্রসংশা করেন। অস্কারের জন্যও মনোনয়ন পান সেই বছর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিততে পারেননি এওয়ার্ডটি। কিন্তু জিতে ফেলেন এক তরুণীর মন, বিয়ে করে ফেলেন সেই বছরই। তখনও তার জীবন অভিশাপমুক্ত হতে পারেনি। বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত হয়ে বেশ কয়েকবার কারাবন্দী হন। এমনকি কারাগারে তাকে অমানষিক নির্যাতন করা হয়। একবার জ্ঞান ফেরার পর দেখতে পান, তিনি নিজের রক্তের স্রোতের উপর শুয়ে আছেন। জেল থেকে মুক্তির পর স্ত্রী তাকে বিয়ে বিচ্ছেদের চিঠি পাঠায়, নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। তার টাকা পয়সা বা পরিবার কিচ্ছু নেই। এসব ঘটনায় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার ক্যারিয়ারও শেষ হয়ে যায়। কি করবেন তিনি? কোথায় থাকবেন কিভাবে থাকবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি। উপায় না পেয়ে তিনি ঘন্টায় ৮ সেন্টের বিনিময়ে একটি পিজ্জার দোকানে বাসনপত্র ধোয়ার কাজ নেন। ব্যক্তিজীবনে খুব খারাপ ইমেজের কারণে সবসময় তাকে অপদস্ত হতে হত।

অবশেষে ২০০৩ সালে তার জীবন অন্যদিকে মোড় নেয়। একজন সুন্দরী ও ধনী মহিলার সাথে পরিচয় হয় তার। দুজনে দুজনার প্রেমে পড়ে যায়। মেয়েটি শর্ত ছুঁড়ে দেয় রবার্ট নেশা না ছাড়া পর্যন্ত তিনি তাকে বিয়ে করবেননা। এই একটি কথায় ম্যাজিকের মতো তার জীবন বদলে যায়। মাত্র দুই বছরের মধ্যে সে পুরোপুরি নেশা থেকে বেরিয়ে আসে। তাদের বিয়ে হয়। নেশা ছড়ার পর থেকেই তিনি তার প্রতিভার ঝলক দেখাতে শুরু করে। কিন্তু তারপরও কেউ তাকে নিয়ে সিনেমায় কাজ করাতে চাইত না শুধুমাত্র তার অতীতের জন্য। এর মধ্যে Iron Man এ অভিনয়ের সুযোগ পান। যদিও এই সুযোগটা এতটাও সহজ ছিল না। তারপরও সে যুযোগটি পেয়ে য্য এবং বাকিটা ইতিহাস। Iron Man মুভিটি ব্লকবাস্টার হিট করে এবং রাতারাতি তিনি সুপারস্টার বনে যান। বর্তমানে তিনি হলিউডের প্রথম শ্রেণির নায়কদের একজন। উঠে এসেছেন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত তালিকার শীর্ষে। একজন নষ্ট হয়ে যাওয়া মানুষ নিজেকে ঘুরিয়ে নিয়ে পৃথিবীর সফল মানুষদের একজন।



ধন্যবাদ সবাইকে।-

Post a Comment

Previous Post Next Post